তর্পন তত্ত্ব
তর্পন মানে উৎসর্গ। শাস্ত্র ভাষা মতে আমার পিতৃকুল,মাতৃকুলর পূর্ব পুরূষ পঞ্চভূতর নশ্বর দেহ ত্যাগ করিয়া পরম গতি লাভ করেছি অর্থাৎ ভবের দেহ থয়া প্রেত জগৎ লাভ করেছি। যেতার কোন আকার আকৃতি ধারণ না করিয়া শূণ্যত(অন্তরীক্ষে) বায়ু ভূত আশ্রয় ও অবলম্বনে অবস্থান(বুলিয়া) করেছি। কোন আত জাং নেই। সূক্ষাতি সূক্ষ মশুলাকৃতি, চর্ম চক্ষুত দৃষ্টি নার। সদায় বংশাবলি ধারা নালা, সৌ-জিবুত, নাতি-নাতল, জিন-জিনি, মিঞ্জিনিয়ে নিত্য তর্পনর উপচার যেহানি অর উহানিয়েই নিমিত্তে মাত্র। ঔহানরে তর্পন বুলতারা। শাস্ত্রমতে আত্মার গতি ও জগত দ্বি প্রকার দেহাত্মা(জীবাত্মা), প্রেতাত্মা। ইহজগত-পরজগত। আত্মা যেবাকা পঞ্চভূতর দেহ ধারণে মাতৃ গর্ভত্ব জরম অয়া এ ভবে আহের ঔহানরে জীবাত্মা বুলতারা।বারো পঞ্চভূতর কায়া ত্যাগ করিয়া বায়ু ভুত অবলম্বনে থার। কোন আত জাং নেই। মশুল আকৃতি অতি সূক্ষ চর্মচক্ষুত দেখা নার। ঔহানরে প্রেতাজগত(পষিত)ও প্রেতাত্মা বুলিয়া শাস্ত্রত লেখা আছে। পুনঃজন্ম,সৎগতি নিজ কর্ম পূন্যফলে প্রাপ্ত অর। বুলিয়া তত্ত্বই প্রকাশ করের। যদিও ঔ পূর্বপুরূষের নিমিত্তে ও নিংশিঙে তর্পন কার্য বিধেয়। বংশ পুরেল লেহেইয়া জিতেগা জিতেগা পেয়ার যে পরমব্রহ্ম স্বয়ং শ্রীহরি সৃষ্টিকর্তা সর্ব ভূতেশ্বর। প্রভুর স্মরনে জগতর সর্ব জীব পুংনিং চিলয়া নিত্য পূজা অর্চনাই উপচার আদি উৎসর্গ করতারা। ঔ উপচার গ্রহন করিয়া হাবিরে বিতরন করের। তত্ত্বই মাতের, এহান সত্য যে আমার পূর্ব পুরুষর পবিত্র পূণ্য আত্মা পঞ্চভূত তথা শোনি(রকত) ধারায় আমার পঞ্চভূতর দেহ তরীর সৃজন। প্রভুর প্রান রূপে অবস্থানে আমি জীবিত অংশ দেহত প্রানরূপে বিরাজে প্রভুয়ে সজীব। তথা বায়ুরূপে বাহিরে থায়া জগতে ধরিয়া থছে। গতিকে বংশাবলী ধারা নালায় পিতৃপুরুষ ও শ্রীহরি নিমিত্তে তর্পন বিধেয়। ঈশ্বর ও পিতৃপুরুষ প্রীতিয়ে জগত প্রীতি। নির্দ্দিষ্ট পক্ষ ও তিথিত(পিতৃপক্ষতঃ) ফল, ফুল, তিল , চউল, দুবগাছ, পানা, গুয়া, সেলকম, মধু আদি শুভ উপচারে জলাশয়, সরোবর, পহরী, নদী আদি অবলম্বনে ও আশ্রয় করিয়া মন্ত্র উচ্চারনপূর্বক তানুর(পিতৃপুরুষ) আত্মা আহবান করিয়া যথাবিধি তর্পন বিধেয়। ঔহান ছাড়াও অন্য কোন বিকল্প অবলম্বনে পবিত্র পাত্র তথা গাত হংকরিয়া উপরোক্ত বিধি মতে উপচারে পিতৃ তর্পন বিধেয়। তদুপরি নিত্য স্থান(হিনানির) পরে সরোবর, নদী, পহরী, জলাশয়র জলে তর্পন বিধেয়। সৃষ্টীর আদি ভূত জল। জলর আশ্রয় ও অবলম্বনে জগত শ্রীহরিয়ে সৃষ্টি করেছেতা। গতিকে জলমাতৃ অবলম্বনে ও আশ্রয়ে তর্পন অইলে পিতৃপুরুষ তথা জগত ঈশ্বরে পার বুলিয়া শাস্ত্রে ইকরা আছে। উহার গজে সর্প পক্ষী,বৃক্ষ তথা দেবতা আহবানে তর্পন করানি থক। তর্পন শুধু পিতৃপুরুষর নিমিত্তে নাগই উপরোক্ত হাব্বির নিমিত্তে করানি থক।
তর্পন বিধি:
👉🏿 দেবতর্পন:
হিনানির পরে তিঙা ফুতি পিদিয়া খৈতং পেয়া পানিত বুরিয়া মুঙেদে মেইথং হান দিয়া অথবা হুকানা ফুতি পিদিয়া ঠেং আহান পানিহাত বুরেয়া ঠেং আহান পারগত থয়া বহিয়া নকুনঙাছ যথারীতি ধারন অর্থাৎ উপবিত অবস্থাৎ বিধি মতে তিলক(নামসা) শিখা বন্ধন, আচমন, দেহশুদ্ধি, উপাচারশুদ্ধি করিয়া অনন্তর আত দ্বহানি জোর করিয়া বিষ্ণু স্মরন করিয়া ব্রহ্মা,বিষ্ণূ,রুদ্র ও জল প্রজাপতির তর্পন করানি থক।
মন্ত্র:
“ওঁ ব্রহ্মা স্তৃপ্যতাং,ওবিষ্ণু স্তৃপ্যতাং,ওঁ রুদ্র স্তৃপ্যতাং,ওঁ প্রজাপতি স্তৃপ্যতাং।”
তদুপরি আত দ্বহানি জোর করিয়া দেব,যক্ষ,নাগ,গন্ধর্ব,সুর আদিরে এক এক অঞ্জলি করানি থক।
মন্ত্র:
“ওঁ দেবা যথাস্তথা নাগা গন্ধর্বা স্পেসুরাঃ
ক্রুরা সর্পাঃসুপর্ণাশ্চ তরবো জিহ্মগাঃখগাঃ
বিদ্যাধরা জলাধারস্তথৈবাকাশগামিনঃ
নিরাহারাশ্চ যে জীবাঃপাপে ধর্মেরতাশ্চ যে
তেষামাপ্যায়নায়ৈতদ্দীয়তে সলিলং ময়া ।।”
👉🏿 মনুষ্য তর্পন বিধি:
অনন্তর নকুল(উত্তরীয়) মালার সাদানে পিদিয়া উত্তর মুখে মেইথং দিয়া বারো সামবেদী ব্রাহ্মণ পোসচীম মূখে মেইথং দিয়া আতজোর করিয়া কণিষ্ঠার মূলে দ্বি অঞ্জলি জল প্রদান করানি।
মন্ত্র:
“ওঁ সনকশ্চ তৃতীয়শ্চ সানাতনঃ।
কপিলশ্চাসুরিশ্চৈষ বোঢ় পঞ্চশীখস্তথা
সর্বে তে তৃপ্তি মায়াস্ত মদ্দত্তেনাম্বুনা সদা।।”
👉🏿 ঋষি তর্পন:
অনন্তর পূর্ব দিকে মুঙ দিয়া নকুন যথারীতিত পিদিয়া দেব তীর্থল অর্থাৎ আতর আঙুলিল ঋষি হাবির নিমিত্তে বিধেয়।
মন্ত্র:
“ওঁ মরীচি স্তৃপ্যতাং,ওঁ অত্রি স্তৃপ্যতাং,ও আঙ্গিরা স্তৃপ্যতাং,
ও পুলস্ত্য স্তৃপ্যতাং,ওপুলহ স্তৃপ্যতাং,ওঁ ক্রতৃ স্তৃপ্যতাং।
ওঁ প্রচেতাস্তৃপ্যতাং,ওঁ বশিষ্ঠ স্তৃপ্যতাং,ওঁ ভৃগু স্তৃপ্যতাং,ওঁ নারদ স্তৃপ্যতাং ওঁ বিশ্বামিত্র স্প্যতাং।”
👉🏿 দিব্য পিতৃ তর্পন:
অনন্তর দক্ষিণেদে মেইথং দিয়া পিতৃতীর্থ(অক্সগুষ্ঠ ও তর্জনীর মূলদেশ)যোগে উপাচার তর্পন করানি থক।
মন্ত্র:
“ওঁ অগ্নিষবাত্তাঃ পিতর স্তৃপ্যন্তামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ স্বধা।
ওঁ সৌম্যঃ পিতর স্তৃপ্যন্তামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ স্বধা।
ওঁ হবিষ্মন্তঃ পিতর স্তৃপ্যন্তামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ স্বধা।
ওঁ উ®পামাঃ পিতর স্তৃপ্যন্তামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ স্বধা।
ওঁ সুকালীনঃ পিতর স্তৃপ্যন্তামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ স্বধা।
ওঁ বর্হিষদঃ পিতর স্তৃপ্যন্তামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ স্বধা।
ওঁ অজাপাঃ পিতর স্তৃপ্যন্তামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ স্বধা।”
👉🏿 যম তর্পন:
অনন্তর দক্ষিণ দিকে মেইথঙ দিয়া নকুন ভাংগুরি লে¤পালে পিদিয়া দক্ষিণ আতর অক্সগুষ্ঠ তর্জ্জনীর মদ্যভাগল প্রত্যেক নাঙ্গে তিন বার অঙ্গলী করিয়া জলে দেনী।
মন্ত্র:
“ওঁ যমায় ধর্ম্মরাজায় মৃতুবেচাস্তকায়চ।
বৈবস্বতায় কালায়,সর্বভূত ক্ষমায় চ।।
ঔশুম্বরায় দধ্নায় নীলায়,পরমেস্থিনে।
বৃকোদরায় চিত্রায় চিত্রগুপ্তায় বৈ নমঃ।।
এতৎ সতিলোদকং ওঁ যমায় নমঃ”
👉🏿 পিতৃ তর্পন:
প্তৃ তর্পনর আগে দক্কখিণ দিকে মেইথং দিয়া যজ্ঞ সূত্র(নকুন)দক্ষিণ লে¤পালে পিদিয়া আত জোর করিয়া পিতৃলোক আহবান করানি বিধেয়।
মন্ত্র:
“ওঁ আগচ্ছন্ত মে পিতর ইমাং গৃহস্তপোহঞ্জলিম্ ”
পিতা, পিতামহ, পিতামহী, প্রপীতামহ, প্রপীতামহী, মাতা, মাতামহী,প্ রমাতামহ,প্রমাতামহী, বৃদ্ধ প্রমাতামহী পিতৃকুল মাতৃকুলর ছ্য পুরেল মোট ১২(বার) পুরেলর তর্পন করানি বিধেয়। শাস্ত্রই নির্দেশ দেছে। বাপক মালক জীবিত থাইলে তানুরে আদ দিয়া গজেত্ত হিসাব বারিয়া ১২ (বার) পুরেলর তর্পন করানি থক। তদুপরি বিমাতা। পিতৃব্য খুরতাক, মামাক, বেয়ক, বনক, তথা বন্ধুবর্গর তর্পন বিধেয়।
👉🏿 তর্পন নিয়ম:
ওঁ বিষ্ণু রোম অমুক গোত্রঃ পিতা অমুকদেব শর্ম্মন তৃপ্যতামেত সতিলোদকং তস্মৈ স্বধা।
ওঁ বিষ্ণু রোম অমুক গোত্রঃ পিতামহ অমুকদেব শর্ম্মন তৃপ্যতামেত সতিলোদকং তস্মৈ স্বধা।
ওঁ বিষ্ণু রোম অমুক গোত্রঃ পিতামহ অমুকদেব শর্ম্মন তৃপ্যতামেত সতিলোদকং তস্মৈ স্বধা।
ওঁ বিষ্ণু রোম অমুক গোত্রঃ প্রপিতামহ অমুকদেব শর্ম্মন তৃপ্যতামেত সতিলোদকং তস্মৈ স্বধা।
ওঁ বিষ্ণু রোম অমুক গোত্রঃ মাতামহ অমুকদেবী শর্ম্মনী তৃপ্যতামেত সতিলোদকং তস্মৈ স্বধা।
ওঁ বিষ্ণু রোম অমুক গোত্রঃ প্রমাতামহ অমুকদেবী শর্ম্মনী তৃপ্যতামেত সতিলোদকং তস্মৈ স্বধা।
ওঁ বিষ্ণু রোম অমুক গোত্রঃ বৃদ্ধ প্রমাতামহ অমুকদেবী শর্ম্মনী তৃপ্যতামেত সতিলোদকং তস্মৈ স্বধা।
ওঁ বিষ্ণু রোম অমুক গোত্রঃ মাতা অমুকদেবী শর্ম্মনী তৃপ্যতামেত সতিলোদকং তস্মৈ স্বধা।
ওঁ বিষ্ণু রোম অমুক গোত্রঃ পিতামহী অমুকদেবী শর্ম্মনী তৃপ্যতামেত সতিলোদকং তস্মৈ স্বধা।
ওঁ বিষ্ণু রোম অমুক গোত্রঃ প্রপিতামহী অমুকদেবী শর্ম্মনী তৃপ্যতামেত সতিলোদকং তস্মৈ স্বধা।
ওঁ বিষ্ণু রোম অমুক গোত্রঃ মাতামহী অমুকদেবী শর্ম্মনী তৃপ্যতামেত সতিলোদকং তস্মৈ স্বধা।
ওঁ বিষ্ণু রোম অমুক গোত্রঃ প্রমাতামহী অমুকদেবী শর্ম্মনী তৃপ্যতামেত সতিলোদকং তস্মৈ স্বধা।
ওঁ বিষ্ণু রোম অমুক গোত্রঃ বৃদ্ধপ্রমাতামহী অমুকদেবী শর্ম্মনী তৃপ্যতামেত সতিলোদকং তস্মৈ স্বধা।
নোটঃ উপরোক্ত মন্ত্র সলকরিয়া পিতামহরাংত চিংকরিয়া প্রপিতামহী পেয়া প্রত্যেকরে তিন তিন অঞ্জলী তর্পন করানি বিধেয়। পিছে আকখুরাং মাতামহী,প্রমাতামহী ও বৃদ্ধ প্রমাতামহী এরে তিনগিরে এক এক অঞ্জলি তর্পন করানি বিধেয়।অন্যান্য বন্ধু বান্ধবর নাঙ গোত্র সলকরিয়া এক এক তর্পন বিধেয়।
👉🏿 ভীষ্ম তর্পন:
আমার ইপুথৌ ভীষ্মদেবর নিমিত্তে পিতৃ তর্পনর রীতি অনুসারে একবার অঞ্জুলি তর্পন করানি থক ।
মন্ত্রঃ
“ও বৈয়াঘ্র পদ্য গোত্রায় সাঙ্কৃতি প্রববায় চ।
অপুরায় দদাম্যেতৎ সলিলং ভীষ্ম বর্ম্মণেঃ।।’
জলাঞ্জলি তর্পনর পরে নিবেদন করানি বিধেয়।
মন্ত্র:
“ভীষ্ম শান্তনবো বীরঃ সত্যবাদী জিতেন্দ্রীয়ঃ।
আভিরদ্ভিরবাপোতু পুত্র পৌত্রোচিতাং ক্রিয়াম্।”
ভীষ্মাষ্টমী অর্থাৎ মাঘী শুক্লাষ্টমী তিথিতে ভীষ্মদেবর তর্পন করানি থক। প্রত্যেক দিন না করলেও দোষ নেই। ব্রাহ্মণ তথা অন্যান্য জাতিয়ে পিতৃ তর্পনর পরে ভীষ্ম তর্পন করানি থক।
0 Comment "তর্পন তত্ত্ব - মিহির সিংহ (নিংশিং চে - ২০১৬)"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন